Monday, June 8, 2009

সাক্ষাৎকার

"আরো জোরে বল করতে চাই"
ঢাকা, ৫ জুন (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) --- তার উত্থানটা যেন এক রূপকথা। দুই বছর আগেও যাকে সেভাবে কেউ চিনত না, সেই রুবেল হোসেনই এখন গতি দিয়ে সবার নজর কাড়ছেন। টি২০ বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডে চারটি প্রস্তুতি ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া এই পেসারের অ্যাকশনেও আছে বৈচিত্র্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে নিয়মিতই ঘন্টায় ৯০ মাইল গতিতে বল করেছেন তিনি। টাইগার ক্রিকেট ডটকম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবশ্য নিজের গতির রহস্য খোলাসা করতে পারেননি তিনি নিজেও।

প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেটে আসার গল্পটা বলুন।

রুবেল হোসেন: আমার শহর বাগেরহাটে খুব ছোট থাকতেই ক্রিকেট খেলতাম। যদিও বেশিরভাগ সময় টেপ জড়ানো টেনিস বলেই খেলেছি। পরে অবশ্য স্থানীয় লিগেও খেলেছি। ঢাকায় খেলতে এসেছি মাত্র তিন-চার বছর আগে। এলাকার এক বড় ভাই আমাকে তৃতীয় বিভাগে খেলাতে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

প্রশ্ন: ‘লাকি ব্রেক’টা পেলেন কখন?

রুবেল হোসেন: কয়েক বছর আগে গ্রামীণফোন পেসার হান্টের পর থেকেই সবকিছু বদলে যেতে থাকলো। আমি ঘন্টায় ৮২ মাইল গতিতে বল করে বিসিবি’র পেস একাডেমীতে ঢুকে গেলাম। ২০০৭ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেললাম। এ বছরের শুরুতে জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার আগে একাডেমী এবং ‘এ’ দলের হয়েও খেলেছি।

প্রশ্ন: সবসময়ই কী জোরে বোলিং করতেন?

রুবেল হোসেন: হ্যাঁ, তবে এখনকার মতো গতি শুরুতে ছিল না। এই যেমন প্রথম গ্রামীণফোন পেসার হান্টের কথাই আপনাদের বলি। সেবার আমার দ্রুততম গতি ছিল ঘন্টায় ৭২ মাইল। এজন্য ওইবার আমি টিকিওনি। এরপর একদিন হঠাৎ করেই দেখলাম আমার বোলিংয়ের গতি বেড়ে গেছে অনেকটাই। এক বছর পর পরবর্তী পেসার হান্টে ৮২ মাইল গতিতে বোলিং করলাম। সত্যি কথা বলতে কী, কেমন করে গতি বাড়লো সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই আমার নেই।

প্রশ্ন: আপনার বয়স এখন মাত্র ১৯। কাজেই গতি আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে।

রুবেল হোসেন: আমিও তাই আশা করি। এখানে (ইংল্যান্ডে) আমার দ্রুততম ছিল ঘন্টায় ৯২ মাইল (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে)। আমি আরো জোরে বল করতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য।

প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেট জীবনে তো সবকিছু খুব দ্রুতই ঘটে গেছে।

রুবেল হোসেন: এটা সত্যি কথা। আমার চারপাশের খেলোয়াড়দের দেখে মাঝে মাঝে নিজেকে চিমটি কেটে দেখতে হয়। মাশরাফি সবসময়ই আমার আদর্শ, অথচ এখন আমি তার সঙ্গেই কিনা বোলিং করছি। রাজ্জাক আমাদের শহরের, অনেক আগে থেকেই তিনি সেলিব্রেটি। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর বাগেরহাটে তাকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমার জীবনের স্মরণীয় এক মুহূর্ত সেটা।

আসলে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। পেসার হান্টে নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রিকেটের মৌলিক প্রশিক্ষণটাই কখনো পাইনি। ফুটবলই বেশি খেলতাম এবং বাগেরহাটের স্থানীয় লিগে নিয়মিত খেলতাম। ওটাই ছিল আমার একমাত্র ফিটনেস রুটিন। এছাড়া আমি ক্রিকেট খেলতাম, খেতাম এবং ঘুমাতাম। কিন্তু একাডেমীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ফিটনেস এবং জিম ওয়ার্কের সঙ্গে পরিচয় হল। আর সুযোগ-সুবিধাও দারুণ। আর এই পর্যায়ে আসার জন্য পেস বোলিং কোচ সারোয়ার ইমরান ও চম্পাকা রামানায়েকের কাছে আমি ভীষণ ঋনী।

প্রশ্ন: আপনার ‘আইডল’ এর সঙ্গে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

রুবেল হোসেন: আমি তার নিজ শহর নড়াইলের একটা প্রতিযোগিতায় মাশরাফির বিপক্ষে বোলিং করেছিলাম। তার উইকেট পেতে আমার মাত্র তিনটি বল লেগেছিল। এবং সেটা বাউন্সারে। আমি আশা করেছিলাম তিনি কিছু বলবেন। কিন্তু কিছু বললেন না। তবে অবশেষে তার সঙ্গে কথা বলার সাহস হল যখন আমি জাতীয় দলে ডাক পেলাম। তিনি দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার এবং দারুণ একজন মানুষ।

প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে পরিবারের সমর্থন কতোটা ছিল?

রুবেল হোসেন: বিশেষ করে এখন পরিবারের সবাই খুব সমর্থন দেয়। আমাকে তো বাড়ির বাইরেই বেশি থাকতে হয় এবং এটা তারা বোঝেন। আমি ক্রিকেটারই হতে পারতাম না, যদি না সবসময় মায়ের প্রশ্রয় পেতাম। শুরুর দিকে বাবা শুধুই খেলা নিয়ে পড়ে থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু মা সবসময়ই আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছেন। আর এখন তো আমার খেলার সময় গোটা পরিবারের চোখ টেলিভিশনে আটকে থাকে।

ক্স সাক্ষাৎকারটি টাইগারক্রিকেট ডটকম থেকে নেয়া।



বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমপি/এএআর/১৯৩৪ঘ.

No comments: